
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক করে ১৫ দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৫৪৮ জনকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে হ্যাকার দল। এসব সনদ যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের ঠিকানা দেখানো হয়েছে জামালপুর, শরীয়তপুর, উখিয়া ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এদের মধ্যে রোহিঙ্গারাও রয়েছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে ২২ জানুয়ারি পাঁচটি ওয়ার্ডের ৫৪৬টি জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ও ইস্যু করার তথ্য পাওয়া যায়। পরে কাউন্সিলর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানা যায়, পাঁচটি ওয়ার্ডের মোট ৫৪৬টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছে হ্যাকাররা। এর মধ্যে ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৪০৮টি, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের ৮৪টি, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের ৪০টি, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১০টি এবং ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের চারটি।
এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে, অবহিত করা হয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ইস্যু করা সনদগুলো বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চসিকের আইটি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হাসান বলেন, “সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে। তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”জানা গেছে, চসিকের জন্মনিবন্ধন আইডি প্রথম হ্যাক করা হয় ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন দেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল সার্ভারের আপগ্রেডেশনের কাজ চলার সময় হ্যাক করে ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ছয় নম্বর চকবাজার এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এর মধ্যে ১২টি ছিল রোহিঙ্গার নামে। এ ঘটনায় পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট জন্মনিবন্ধন সহকারীরা।
এদিকে ৮ জানুয়ারি আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ইস্যু করা হয় চারটি জন্মনিবন্ধন সনদ। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ১৪ জানুয়ারি জিডি করেন জন্মনিবন্ধন ডাটা এন্ট্রি সহকারী সঞ্জীব আচার্য্য। এছাড়া ১০ জানুয়ারি ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ১০টি এবং ২১ জানুয়ারি ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ৮৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়।
একের পর একে হ্যাকিংয়ের ঘটনায় চিন্তিত কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীরা। তাদের ধারণা, সংঘবদ্ধ প্রশিক্ষিত কোনো চক্র এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, “এ ধরনের ঘটনা দেশের অনেক জায়গায় ঘটছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।” হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যেসব সনদ ইস্যু হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।