সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪

নৌকা ছাড়াই উপজেলা নির্বাচন’, সম্মতি শেখ হাসিনার

দলীয় প্রতীক ছাড়াই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় এ বিষয়ে মত দেন বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


সভা শেষে রাতে গণভবনের গেইটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সভাটি আমাদের পার্টির জরুরি সভা। জরুরি বিষয়ে আলাপ করার জন্যই জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।’

সভায় সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতি, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) একটা নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন। মূলত ওয়ার্কিং কমিটি আলোচনা করেছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়া হবে কিনা, দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে কিনা, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় প্রতীক না দেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন সদস্যরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবার মতামতের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করেন।’


ওবায়দুল কাদের বলেন, পরবর্তিতে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড, সংসদীয় বোর্ড- দুটি বোর্ড আছে। দুটি বোর্ডে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচন পরবর্তি দলীয় যে কোন্দল- দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অন্তঃকলহ, তা মীমাংসায় দলের ৮টি বিভাগী কমিটির নেতাদের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভা হয়। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সভায় সূচনা বক্তব্যে রাখেন।

যারা অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় বা পণ্য মজুত করে রাখে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। নির্বাচনের পর হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে ‘ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়বে কেন’- এই প্রশ্নও রাখেন সরকারপ্রধান।


তিনি বলেন, এই চক্রকে খুঁজে বের করা হবে। অস্বাভাবিকভাবে দুরভিসন্ধিমূলক কোনো মজুত পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের জেলে দিতে হবে।


মজুতদারদের রুখতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলা মেনে নেওয়া হবে না। কেউ কালোবাজারি বা জিনিস মজুদ করলে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানাতে হবে।

‘নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি অন্যভাবে কিছু করার চেষ্টা চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তবে নতুন সরকারের শুভফল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই তার লক্ষ্য।

পরে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জরুরি সভা আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা গতকাল দুপুরে সংবাদকে বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর দেশের মানুষকে কীভাবে ভালো রাখা যায়, এটা একটা বিষয়। দ্রব্যমূলের বিষয়ে কথা হতে পারে। হঠাৎ দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে রমজান আবার রমজান।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের পারফরমেন্স, সমানে আবার উপজেলা নির্বাচন- এই বিষয়গুলো আসবে। সমসমায়িক রাজনীতিও আছে... বিএনপি ভোট ঠেকাতে পারেনি। এখন তারা কী ষড়যন্ত্র করছে... এগুলোও গুরুত্ব পাবে। সার্বিক একটা নির্দেশনা দেবেন নেত্রী।’

প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্যে সদস্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার চালাতে লিফলেট বিতরণ করেছে। কিন্তু মানুষ তাদের কথায় কান দেয়নি। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেছেন।’

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনের এবার ইতিহাস তৈরি হয়েছে। ১৯৭৫ এর পর প্রতিটি নির্বাচন সম্পর্কে জানা আছে। মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেললে মানুষ মেনে নেয় না। সাত জানুয়ারির ভোটে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগহণ করেছে।’

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন করা না করার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে রাজনৈতিক দলের ওপর। এ দেশের মানুষ এবারের ভোট গ্রহণ করেছে। হ্যাঁ, এই নির্বাচন অনেকের পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু মানুষ তো ভোট দিয়েছে। অথচ কিছু আঁতেল ভোট নিয়ে ধুম্রজাল তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আর অস্বাভাবিক সরকার আসবে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। যারা বাধা দেবার চেষ্টা করবে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নতি হয় না, সেটা প্রমাণিত।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অযথা একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে, কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেল, জিনিসের দাম বেড়ে গেল। আমরা জানি করোনাভাইরাসের অতি মারির কারণে, এর পরে ইউক্রেন রাশিয়ারযুদ্ধ, এর পরে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশ না উন্নত দেশও ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘যে সকল জিনিস আমাদের বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়ে, যেমন গম, চিনি, ভোজ্য তেল, গ্যাস। কারণ আমাদের যা আছে তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম। আমাদের দেশ, সতের কোটি মানুষের দেশ। যে সকল জিনিস আনতে হয় এগুলোর উচ্চ মূল্য, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে সেই কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার কারণে আমরা শুরুতেই বলেছি আমাদের নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে। এবারও আমাদের ফসল ভালো হয়েছে, চাল উৎপাদন বেড়েছে। তার পরেও হঠাৎ দাম বাড়াটা এই রকম ভরা মৌসুমে এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এটার পেছনে কারা আছে এটা একান্তভাবে বের করা দরকার। শুধু দরকার না এবং এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা আমরা আগামীতে করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম যাকেই পাওয়া যাবে মোবাইল কোর্ট লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। আগামীতে আমরা সেই ব্যবস্থাটাই নেব। এখন থেকে প্রথমে ওই জায়গাতেই আঘাত করতে হবে।

তিনি আরও বলেণ, ‘ডিম সেটাও মজুত করে রাখা হয়। এর আগে পেঁয়াজ- একটার পর একটা পচা পেঁয়াজের বস্তা ফেলে দেওয়া হলো। এটা কোন ধরনের কথা? মানুষের খাবার নিয়ে খেলা, এর তো কোন অর্থ হয় না, আর এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ারও কথা না। এ সময় তো আরও কমে জিনিসের দাম।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘তরি-তরকারি ফলমূল আমাদের সরবরাহের তো কোনো অভাব নাই। যে কোনো কৃষি পণ্যের দাম বাড়লের যারা ভোক্তা তাদের কষ্ট হয়। কৃষক যদি দামটা পায় তারা খুশি হয়। কৃষক ন্যায্য দামটা পাচ্ছে। কিন্তু যে দামটা পরিবহন খরচ ও সব মিলিয়ে হওয়া উচিত তার থেকে অতিরিক্ত বেশি। সেই জন্য দুরভিসন্ধি নিয়ে যদি কেউ মজুত রাখে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নেব। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নানা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে অবিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আরও কিছু চেষ্টা করা হয়েছে, গার্মেন্টসের মজুরি বাড়ানো হল, তার পরেও রাত বারটা বাজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। এটা করে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়ে এখন অন্যভাবে নামতে চাচ্ছে। সেভাবে করতে দেব না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। মানুষ আনন্দিত, খুশি এই পর্যন্ত যে উন্নয়নটা করেছি এর সুফলটা যেনে জনগণ পায়, এই চেষ্টা টাই করছি।’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.