শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

সখীপুরে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতেই ব্যবসায়ীকে হত্যা করেন মোস্তফা ও আল-আমীন

সমিতির ঋণ পরিশোধের টাকার জন্য হত্যা করা হয়েছিল টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনুকে। সম্প্রতি হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোস্তফাসহ জড়িত আরও দুজনকে গ্রেফতারের পর এই তথ্য জানা যায়। র‌্যাব জানিয়েছে— মোস্তফা এলাকার একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সুদসহ সেই টাকা পরিশোধ করতে খুঁজতে থাকেন অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের পথ। দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ জালালকে। এরপর সুযোগ বুঝে ওই ব্যবসায়ীর পথ রোধ করে টাকার জন্য হত্যা করা হয় শাহ জালাল ও তার চাচাকে।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকা থেকে শাহজালাল ও তার চাচা মজনু হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মোস্তফাসহ জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

খন্দকার আল মঈন জানান, শাহজালাল টাঙ্গাইলের সখিপুরে দীর্ঘদিন ধরে মনোহারি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি উপজেলার হামিদপুর বাজারের একজন জনপ্রিয় ও অতিপরিচিত ব্যবসায়ী। শাহজালালের চাচা ভিকটিম মজনু মিয়া এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। মজনু মিয়া শাহজালালকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করতেন। শাহজালাল ব্যবসায়িক কাজ শেষে রাতের খাবার খেতে বাড়িতে যেতেন। তিনি তার ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা বাড়িতেই রাখতেন। ঘটনার দিন নিহত শাহজালাল দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে তার চাচা মজনু মিয়াকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে একত্রে বাড়িতে ফিরছিলেন।

তিনি জানান, মোস্তফার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেফতার মোস্তফা এবং আলামিন উভয়ে স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য ছিল। মোস্তফা সমিতি থেকে উচ্চ সুদে বেশকিছু অর্থ লোন নেয়। সেই টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ বহনে তার বেশকিছু অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাই পেশার বাইরে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করেন। শাহ জালালের ব্যবসায়িক টাকা বাড়িতে রাখার বিষয়টি জানতেন মোস্তফা ও আল আমিন। এরপর আচমকা আক্রমণ করে সেই টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেন মোস্তফা। পরে সেই পরিকল্পনা আল আমিনকে জানালে তিনিও সম্মতি দেন।  

পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা ও আল আমিন বাঘের বাড়ি এলাকায় নির্জন জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকেন। শাহজালাল মোটরসাইকেলযোগে তার চাচা মজনুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের গতিরোধ করেন। মোস্তফা লোহার রড দিয়ে শাহজালালের মাথায় আঘাত করেন। শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তফা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আলামিন লোহার রড দিয়ে মজনু মিয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যপুরি আঘাত করেন। পরে মোস্তফা ও আলামিন মাটিতে লুটিয়ে থাকা ভিকটিম শাহজালাল ও মজনুকে লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, আল আমিন নিহতের সাথে থাকা মোটরসাইকেলটি পাশের একটি জমিতে ফেলে দেয় এবং মোস্তফা ভিকটিম শাহজালালের ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে ১টি আলামিনকে দেয় এবং অপরটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেয়। পরে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং ঢাকায় আত্মগোপন করেন।

মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গ্রেফতার আল আমিন গত ৩ মাস আগে তার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেন। আল আমিন ইতিপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গিয়েছিলেন এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরত আসেন। গ্রেফতাররা বিভিন্ন সময় এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড করতেন বলে জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.