
সয়াবিন তেল ও চিনির দুষ্প্রাপ্যতার মধ্যেই পণ্য দুটির দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৩ টাকা।
দুটি সংগঠনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দাম সমন্বয় করেছে, যা কার্যকর হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯০ টাকা। সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলের দাম ধরা করা হয়েছে ৯২৫ টাকা। এ ছাড়া লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭২ এবং পাম তেলের দাম ১২১ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে এখন থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি কিনতে হবে ১০২ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি কিনতে কেজিপ্রতি খরচ করতে হবে ১০৮ টাকা।
আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তেল ও চিনির দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে সমন্বয় করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১ নভেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করা হয়। পরে দুই দফায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড কমিশনের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। দাম সমন্বয়ে সম্মত হয় কমিশন।
চিনির দাম বাড়ার বিষয়ে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, গত ৩ নভেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করা হয়। পরে দুই দফায় ট্রেড অ্যান্ড কমিশনের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে সম্মত হয় কমিশন।
বাজারে তেল-চিনির সংকট
এদিকে বরাবরের মতো এবারও দাম বৃদ্ধির আগে বাজারে তৈরি হয় চিনি ও ভোজ্যতেলের সংকট। যাও দু’এক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে, তারা কেজিপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা হাঁকছে। সয়াবিন তেলেও একই অবস্থা।
চিনির সংকটে ব্যাহত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা পরিচালনা। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চিনি উৎপাদক সমিতির বৈঠক হয়। সেখানে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে গ্যাস স্বল্পতাকে দায়ী করেন। মন্ত্রী আশ্বাস দেন স্বল্প সময়ে এ সংকট কেটে যাবে। কিন্তু এখনো পরিস্থিতির উন্নতি নেই।
৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চিনির বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশি প্যাকেটজাত এক কেজি চিনির দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো বিক্রেতা এর থেকে বেশি দামে দেশি চিনি বিক্রি করতে পারবেন না।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬ অক্টোবর খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারণ করে দেয়া কোনো দামই কার্যকর হয়নি।
এদিকে চলতি মাসের প্রথমে লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় তেল উৎপাদক সমিতি। তারা ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯৩ টাকা, ৫ লিটার ৯৫৫ টাকা, ১ লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশনকে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য নির্দেশনা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী দাম প্রস্তাব হলে এতদিন মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে কোনো দাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে দাম কার্যকর না করায় তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।