বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২

সন্তানকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলেন বাবা, ফিরে পেতে মায়ের আকুতি

মাত্র ২৫ হাজার টাকায় ১৫ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করেছেন বাবা রবিউল ইসলাম। দুই মাস ধরে বুকের ধনকে ফিরে পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় মা। নিরুপায় হয়ে সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ওই মা। 

নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামে। অসহায় ওই মায়ের নাম মোছা. আছিয়া খাতুন। জানা গেছে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মাঝ বয়সী এই দম্পতি অনেক দিন ধরেই কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লাগত। 

তাঁদের এরই দুই সন্তান রয়েছে। গত তিন মাস আগে এই দম্পতির আরেকটি শিশু কন্যার জন্ম হয়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জেরে মায়ের অগোচরে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে বিক্রি করে দেন বাবা। এরপর থেকেই সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে স্বামীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন মা। কিন্তু এখনো সন্তানকে ফিরে পাননি ওই অসহায় মা। 

আছিয়া খাতুন বলেন, ‘গোপনে আমার দুধের সন্তানটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন স্বামী। আমি সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে বললে আমাকে মারধর করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি ২৫ হাজার টাকায় কাপাসিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে আমার সন্তানটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি আমার সন্তানকে ফেরত পেতে স্বামীসহ এলাকার অনেক মানুষের কাছে গিয়েছি। কেউ আমার সন্তানকে এনে দেননি।’ সন্তানকে ফেরত পেতে প্রশাসনের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তিনি। 

রবিউল ইসলাম সন্তান বিক্রির কথা স্বীকার করলেও স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার। খাবার জোগাড় করতে পারি না। না খেয়ে থাকতে হয়। আমার স্ত্রী পাগল। দুই সন্তানকেই দেখাশোনা করতে পারে না। আমার মা সন্তানদের দেখাশোনা করে। তাই ২৫ হাজার টাকায় ছোট সন্তানকে বিক্রি করে একটি টমটম গাড়ি কিনেছি। এখন এই টমটম চালিয়ে টাকা রোজগার করছি।’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. খুরশীদ উদ্দিন বলেন, ‘তিন মাস বয়সী শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য। এটা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে রবিউল কারও কোনো কথা শুনছে না। তাঁকে আইনের আওতায় এনে সন্তানটিকে উদ্ধারে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাই।’ 

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিশুটিকে কোথায় বিক্রি করা হয়েছে ঠিকানা সংগ্রহ করে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেব।’ 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.