দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মালেক শুরুতে দারিদ্রতার কারণে রোজা রাখা শুরু করেন। তবে এখন তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখেন বলে জানান।বিষয়ে জানতে চাইলে মালেক বলেন, জন্মগতভাবে আমার ডান চোখ অন্ধ ছিল।
এক চোখ দিয়ে আমি কোনোরকমে পড়াশোনা করে রংপুর বোতলাপাড়া তালিমুল কোরআনিয়া মাদরাসা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে কারিয়ানা পাস করি। বাবা দিনমজুর হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে এলাকায় টিউশনি করিয়ে সংসার চালাতাম। এছাড়া আমাদের ইউনিয়নের কাঠাঁলবাড়ি কাজীপাড়া, মণ্ডলপাড়া ও শিবরাম খামারপাড়া জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে সময়ভেদে ইমামতি করে আয় করতাম।
তখন সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসা শুরু করে। এরপর বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছরের মাথায় আমার ডান চোখের অন্ধতার প্রভাবে বাম চোখও নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাবা বৃদ্ধ মানুষ। সংসারে উপার্জন করার কেউ না থাকায় আবার কষ্ট শুরু হয়। সেই থেকে আমি রোজা রাখা শুরু করি। আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে রোজা করে আসছি। কেবল দুই ঈদে পাঁচদিন রোজা থাকি না। এসময় রোজা রাখা হারাম।মালেক আরও বলেন, স্ত্রী, তিন সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে আমার সংসার। বাবার অপারেশনের পর আর কাজ করতে পারে না। আমরা স্ত্রী-সন্তান খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়।
বড় মেয়ে মীমের বয়স ১১ বছর, ছোট মেয়ে লামিয়ার সাত বছর। ওরা হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়ে। আমরা নিজেরা খেতে পারি না। সন্তানদের ভরণপোষণ ও পড়াশোনার খরচ আমার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করছি।
আব্দুল মালেকের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, আমার বিয়ের ১৪ বছর হলো। বিয়ের দুইবছর পর থেকে আমার স্বামী নিয়মিত রোজা রেখে আসছেন। আমাদের অভাবি সংসার। শ্বশুর-শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমার স্বামী দুই ঈদের পাঁচদিন বাদে সারাবছর রোজা রাখেন।
প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন বলেন, আব্দুল মালেক প্রায় ১০-১২ বছর ধরে রোজা করে আসছেন। জন্মগতভাবে তার ডান চোখ অন্ধ ছিল। আগে এক চোখ দিয়ে দেখতো। বাচ্চাদের আরবি শেখানো, বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালাতো। দুচোখ যখন পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায় তখন তার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার এক ব্যক্তি মালেকের ঘর তুলে দিয়েছে। কিন্তু বাচ্চাদের পড়াশোনা ও সংসার চালানোর মতো আয়ের পথ না থাকায় খুব কষ্টে আছেন তিনি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, একটানা দীর্ঘদিন রোজা রাখা ইসলামি মতে মাকরুহ। তবে বিরতি দিয়ে রোজা রাখা উত্তম।
কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেদওয়ানুল হক দুলাল বলেন, আব্দুল মালেকের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো সুযোগ আসলে ওই পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।