সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

নারীকে অশ্লীল গালিগালজের ভিডিও ভাইরাল, এসআই ক্লোজড

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রোঁস্তোরায় বৈঠকে বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে (৫৭) পুলিশের উপ-পরিদর্শকের গালিগালাজের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।  

অভিযোগ উঠেছে, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে ও মুঠোফোনে ভুক্তভোগীকে অশ্লীল ভাষাষ গালিগালাজ করেন এসআই রতন। এমনকি পরদিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে তার বাড়ি গিয়েও হুমকি দিয়ে আসেন এসআই রতন। 

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণার মাধ্যমে সৌদিতে নিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবেন। বেতন হবে ১ হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু সাইফুল আমার ছেলেকে চাকরি না দিয়ে তিন মাস একটা রুমে আটকে রাখে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। এক পর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১ হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয় না।  

তিনি আরো বলেন, এসব প্রতারণার ঘটনায় ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে এসআই রতন আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তাকে ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল। 

সেতারা বেগম বলেন, শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে অবহিত করে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক রেস্তোঁরায়। রোঁস্তোরায় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তখন এসআই রতনকে জানাই থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই আমাকে থানার গেইটে আসতে বলেন। সেখানে গেলে পুনরায় এসআই রতন প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করেন। 

তিনি বলেন, একজন মানুষকে প্রকাশ্যে এভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে, তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। আমি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি পুলিশ প্রধানের কাছে।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলাম। তবে রেস্তোরাঁয় বৈঠকে না যাওয়ায় রাগের মাথায় একটু উত্তোজিত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই এসআই।    

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পেশাগত কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালিগালাজের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই এসআই রতনকে ক্লোজড করা হয়েছে।  

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.