বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে চোখ উঠা রোগ

ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হচ্ছে চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভিজি বা কনজাঙ্কটিভা রোগটি। ভাইরাসের কারণে রোগটি হয়ে থাকে। রোগটি হলে কারো কারো কোনো চিকিৎসা ছাড়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। 

আবার কারো চিকিৎসা লাগে। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিনমাস এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে। রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকায় রোগটি দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে কোনো প্রতিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক নয়। এটা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।জানা গেছে, চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখ চুলকানি, চোখ লাল বা গোলাপি হয়ে যাওয়ার লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় খচখচে ভাব হতে পারে, মনে হতে পারে চোখে কাটা ফুটেছে। 

আবার চোখ থেকে পানি পড়ে, বারবার সাদা ময়লা আসা, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ও মাঝারি ব্যথা অনুভূত হয়।চোখ ওঠা রোগটি এতোটাই ছোঁয়াচে যে, চোখ ওঠা রোগীর সংস্পর্শে না এসে কাছাকাছি থাকলেও এ চোখ ওঠে পারে। কারণ ভাইরাসটি বাতাসে ছড়াতে পারে। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ, টিসু অন্যরা ব্যবহার করলে তারা আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কাছাকাছি না থাকলেও অন্যদের হয় আবার খুবই কাছাকাছি থাকার পরও চোখ ওঠে না। তবে যাদের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা এই রোগীর কাছে থাকলেও তাদের চোখ ওঠে না।বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভাইরাসে চোখ ওঠা রোগটি হচ্ছে এই ভাইরাসটি চোখের কালো (কনজাঙ্কটিভা) অংশটিকে বেশি আক্রান্ত করে।

 তবে মাঝে মধ্যে চোখের কর্নিয়াকেও আক্রান্ত করতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে চোখের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। তিনি মেশিনে চোখ পরীক্ষা করে কিছু ওষুধ দেবেন। বরং আমি বলবো, মেশিনে পরীক্ষা করে চোখের চিকিৎসা করালেই যথাযথ চিকিৎসা হয়। চোখের ডাক্তার রোগীকে অ্যান্টি হিস্টাসিন দিতে পারেন। দিতে পারেন চোখের অ্যান্টিবায়োটিক। 

একই সঙ্গে তিনি লো স্টেরয়েডও দিতে পারে।চিকিৎসক নর্মাল স্যালাইন দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে বলতে পারেন। নরসল নামে চোখের ড্রপ পাওয়া যায় ওষুধের দোকানে। রোগটি কর্নিয়াকে আক্রান্ত করলে যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা করা দরকার। না হলে কর্নিয়াতে দাগ পড়ে যেতে পারে। ফলে রোগী পরে স্থায়ীভাবে ঝাপসা দেখতে পারেন। অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস আরো বলেন, চোখ ওঠার রোগীর চোখের পানি পাতলা টিস্যু দিয়ে মুছে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। চোখের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাস থাকে। এই পানিটি খুব সাবধানে মুছে টিস্যুই হোক বা অন্য কিছু হোক যত্রতত্র ফেলা যাবে না।

 চোখ ওঠা রোগীরা গরম সেঁক দিলে আরাম বোধ করবেন। এ ক্ষেত্রে ধূলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম। প্রয়োজনের চোখে কালো রঙের সানগ্লাস বা চশমা ব্যবহার করতে হবে।রাজধানী কয়েকটি স্কুলে চোখ ওঠা শিক্ষার্থীদের মৌখিক ভাবে ক্লাসে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বছরে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এবিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজারে চোখের ড্রপের কোনো সংকট নেই। তবে অপ্রচলিত হওয়ায় সাধারণত পাড়া মহল্লায় এই ওষুধগুলো ফার্মেসিগুলো রাখে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল, 

বিশেষ করে চোখের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রপ রয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার পর চোখে ড্রপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিনে তিনি।’চোখ ওঠা বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বাংলাভিশনে বলেন, চোখ ওঠলে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা হবে কিনা এনিয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। 

যদিও অভিভাবকের মধ্যে এটা নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ কাজ করছে। তবে আমরা বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এনিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। পরিস্থিতি অ্যালার্মিং হলেই স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.