কালিহাতী
বিড়ি শ্রমিক থেকে সিএনজি চালক "কালিহাতীতে অবৈধ বালু ব্যবসায় গড়েছে কোটি টাকার সাম্রাজ্য!
সাইদুর রহমান সমীর, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ভূক্তা গ্রামের পিতা মৃত. আব্দুল হালিম বেপারীর ছেলে সহদেবপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন প্রথমে ছিলেন বিড়ি শ্রমিক তার কিছু দিন পর সিএনজি চালক থেকে বিড়ির নকল ব্যান্ডেল, হঠাৎ বালুর ব্যবসা করে কয়েক বছরে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সাম্রাজ্য।
তোফাজ্জল অবৈধ বালু ব্যবসা করে মাত্র কয়েক বছরে ভূক্তা গ্রামে দুটি ভবন সহ বাড়ি, একটি গরুরর ফার্ম, টাঙ্গাইল সদর গারিন্দা ইউনিয়নের সুরুজ গরু সহ ছাগলের ফার্ম, ৫ টা হাই টোলি, দুইটা হাইচ,একটা প্রাইভেট কার, ৪টা ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক, ৩টা এস কে বেটর/বেকু মাটি কাটার কাজ ব্যবহৃত হয়, মিষ্টি বিড়ি ফ্যাক্টরি, বউ এর নামেও ভূক্তা গ্রামে, সুরুজ এবং টাঙ্গাইল শহরে অগণিত সম্পদ রয়েছে। রংপুরে তামাকের ব্যবসা সহ অগণিত সম্পদ রয়েছে। ভোক্তা ও সুরুজে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সম্পদ। ওই অবৈধ সাম্রাজ্য রক্ষায় তৈরি করেছেন ক্যাডার বাহিনী। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে চলছে তার অবৈধ কার্যক্রমের মহাযজ্ঞ।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগেও তোফাজ্জল নবা ভূইয়ার বাড়িতে বিড়ি শ্রমিকের কাজ করতেন। ওই শোভাতে নবা ভূইয়ার ছেলে আনোয়ার চেয়ারম্যান এর মেয়ে একটি সিএনজি ক্রয় করে তোফাজ্জল ভাড়ায় চালিত হিসাবে ড্রাইভার সিলেন। এর পর বিড়ি ব্যবসা, নকল ব্যান্ডেল, তামাকের ব্যবসা, হঠাৎ ড্রেজার ও বেকু দিয়ে বালু বিক্রি করে ভাগ্য পরিবর্তন জড়িয়ে পড়েন অবৈধ বালু ব্যবসায়। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত কয়েক বছরে তোফাজ্জল কোটি-কোটি নগদ টাকা ও সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ভূক্তা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের বাবা মৃত.আব্দুল হালিম বেপারী অন্যের মাংসের দোকানে কসাইর কাজ করতেন। সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয় তোফাজ্জল। টাকার অভাবে স্কুলের গন্ডিও পেরোতে পারেনি। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে না পেরে মোহিনী বিড়ির ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন।
সরুজ এবং ভূক্তার আশপাশের নদীতে বর্ষায় বাংলা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরে শুস্ক মৌসুমে ধলেশ্বরী নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি শুরু করেন। অবৈধ বালু ব্যবসার প্রসার ঘটাতে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অবৈধ বালু ব্যবসা করে বিলাশ বহুল বহুতল বাসভবন তৈরি কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
জানামতে, তোফাজ্জলের কয়েকটি অবৈধ বালুঘাট রয়েছে। দিনরাত নদী ও নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছেন। ফলে সরুজ ভূক্তা নদীর উপর নির্মিত একটি ব্রিজ এর আগেও ধ্বসে পড়ছে। বর্তমানে নদীর উপর যে ব্রিজটি নির্মিত আছে, নদীর তল দেশ থেকে ও নদীর তীর কেটে বালু বিক্রির ফলে ব্রিজ ধ্বংসে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। চর ভূক্তা ঈদগাহ মাঠের নামে ১৬২ শতাংশ জমির মধ্যে ১৩২ শতাংশ জমি নদীর গর্ভে এবং পাশেই সামাজিক কবরস্থানের ২৮ শতাংশ জমির মধ্যে ২০ শতাংশ জমি সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘড় নদীর গর্ভে চলে গেছে। নদীর তীর কেটে ফেলায় একদিকে হুমকিতে রয়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা- দুষণ হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে বালু বিক্রি করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে তোফাজ্জল মাসোহারা দিয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবৈধ বাংলা ড্রেজার ও বালু উত্তোলনের খবর জানালেও লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সামান্য অর্থদন্ড দেওয়া হয়- যা বালু ব্যবসায়ীর জন্য সহনীয়। অভিযানের পরই পুনরায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলতে থাকে।
নদীতে বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে সরকারি রাস্তা বিনষ্ট হওয়ায় প্রতিবাদ করায় তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মারপিটসহ হত্যার হুমকি দেয় ওই বালু ব্যবসায়ী।
চর ভূক্তা গ্রামের মৃত. রিয়াজ উদ্দিন ছেলে
জহুরুল ইসলাম জানান, কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বাড়ি, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান সহ ফসিল জমি নদীর গর্ভ চলে গেছে। তাদের ভয়ে কে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী সহদেবপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে অভিযোগকারী ভূক্তা গ্রামের আব্দুল কাদের তালুকদারের ছেলে মো. পলাশ তালুকদার জানান, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার কারণে গত শুক্রবার সকাল ১১ টায় আমার বাড়িতে এসে অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়ার জন্যে তোফাজ্জলের ৪০/৫০ জন ক্যাডার বাহিনী এসে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই পর্যন্ত জেলা উপজেলা মিলে দশটা দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরেও তার কোন প্রতিকার পাইনি। টাকার কাছ সবাই জিম্মি।
সহদেবপুর ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. শামীম মোবাইল ফোনে জানান, তোফাজ্জল অবৈধ ভাবে নদী থেকে অনেক দিন ধরে বালু বিক্রির করে আসছে, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা পারভীন এর জায়গায় জোর করে দখল করে আছে।
এবিষয়ে সহদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান খান ফরিদকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
কালিহাতী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা পারভীন এবিষয়ে জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার কারণে আমাদের দুই জায়গায় ১৬০ শতাংশ জায়গায় দখল করে কিছু জমি ৩০ ফুট গর্ত করে বালু বিক্রি করছে বাদবাকি জমির উপর গরুর ফার্ম করেছে। আমি বড় একটা পদে আছি কিন্তু আমার পিছনে সাপোর্ট দেওয়ার কেউ নেই এজন্যে কিছু বলতে পারি না।