বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২

সাহসী সুমির প্রয়াস ‘স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন’

আহমেদ সাজু : নারী মানেই কল্যাণ, নিপুন প্রেরণা, নিরন্তর এগিয়ে চলা। লোভ মোহহীন নিবেদিত থাকা মা- বোন আর প্রিয়জন মানেই নারী-আলোকিত নারী। তার উপর আবার ভালোবাসবার অপার সমুদ্রও নারী।

পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানের মধ্যে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গৃহকর্ম থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে নারী আজ স্বমহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত। তবুও আমাদের শিল্পমঘা, বঞ্চিত, অনগ্রসর এবং অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল নারী সমাজের ঘরে বাইরে নিগৃহীত, নিপীড়িত ও নির্যাতিতা। 

এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। মহান সৃষ্টিকর্তার করুনায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে ‘স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। বিগত ২০১৯ সাল থেকে কঠিন বাধা বিপত্তি ও পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি সেবা প্রদান করে আসছে। এই অব্যাহত অগ্রযাত্রা ও সাফল্য শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় বিদেশেও এর স¤প্রসারণ হোক স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে ফ্যাশন সচেতন মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছুতে চাই- এতেই আমার সাফল্য।
 
একজন শিক্ষিত মা যেমন একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে, তেমনি একজন শিক্ষিতা সচেতন নারী ও পারে একটি সুদক্ষ, কর্মঠ ও আদর্শে উজ্জীবিত একটি নারী সমাজ গড়ে তুলতে। এখন প্রতিনিয়তই নারী জাগরনের সু বাতাস বইছে চারিদিকে, তাকে কোন ভাবেই আর পিছনে ফিরতে হবে বলে মনে হয়না। আদর্শ নারী বলতে আদর্শ মা,আদর্শ কর্মঠ নারী বলতে সমাজে সৎ চিন্তা ও সৎ উদ্যোগে ব্যবসা, চাকুরী থেকে শুরু করে যে কোন কর্ম ক্ষেত্রে যারা সফল তাদেরকে আমরা বলি সফল নারী। এমনই একজন নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার আসমা আক্তার সুমি। যার শৈশব কেটেছে কুমিল্লা। প্রথমে শাড়ি বুনন দিয়েই তার পথ চলা শুরু হয়। তার পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। 

সফল এই নারী ব্যাক্তিত্ব স্বীয় মেধা ও মনন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ এ অবহেলীত নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিজ গড়ে তুলেছেন নামে গড়ে তুলেছেন স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে দুস্হ ও অবহেলিত নারীদের শিখানো হবে ফ্যাশন ডিজাইন, বøক, বাটিকসহ আরও নানান ধরনের হাতের কাজ। মেষ রাশির এই মহিয়শী নারী ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের গর্বিত জননী। ৫ মাসের গর্ভে থাকা অবস্হায় বাবার মুখটাও দেখতে পারেনি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে তার বাবা। সে হঠাৎ করেই সবার মাঝে নিসংঙ্গ হয়ে গেছে। 

এই গোপন একাকীত্ব কিম্বা কষ্টের জ্বালা ভুলতে তাকে কিছু একটা করতে হবে। একটা সম্ভাবনা ঘিরে বুনতে হবে নতুন স্বপ্নবসতি। কিন্তু কি করবে সে? এই ভীষণ প্রতিযোগিতায় স্রোতে কোথায় ঠাঁই নেওয়া যাবে- খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা অসংগঠিত ভাবেই সে শিখতে শুরু করলো ফ্যাশন ডিজাইন, বুটিকস, নকসা ও শাড়ি বুননের কাজ। না; বিখ্যাত ডিজাইনার হবার মনে সে নয়- সে আসলে দাঁড়ানোর জন্য একটা প্লাটফরম চায়। হয়তোবা এইখানে সে সহজে খুঁজে পাবে তার জীবনের সমাধান। ঐ মেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তুলে নিলো হাতে রঙিন সুতো ও কাঠের বস্তু। 

এই গল্পের মতন খুব কম মেয়েকেই পাওয়া যায় যারা উদ্যোগী হয়ে পথ শুরু করে। আবার সবার জীবনের গল্প- ছন্দ হারানোর পঁচিশোর্ধ ঐ মেয়ের মতো না। নি¤œ মধ্যবিত্ত শহুরে মেয়েরা অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ফ্যাশন জগতকেই বেছে নেয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী কর্মনিষ্ঠার বীজ বুনতে পারেনা। যে সব নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্যাশন জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাদের অনেকেরই জীবনের চিত্রপট ভিন্ন। সংগ্রামী প্রচেষ্ঠার অন্তরালে অগুণিত প্রতিবন্ধকতার কাহিনী। একটা নিরেট বাস্তবতা ঠেলে অল্প কিছু উদ্যমী নারী নিজের প্রফেশনে সফলকাম হতে পারে- বাকিরা প্রাথমিক পর্যায়ে অদৃশ্য ঘূর্ণিপাক থেকে বেরুতে পারে না। সে কারনে অনেকদিন পরও দেখা যায় কাঠের বøক হাতে তুলে নেওয়া সেই নারী রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। মনোবল ভাঙা অথবা সঠিক লক্ষ্যবিহীন একজন ফ্যাশন কর্মী হিসেবে। 

অথচ প্রহসনের যত সত্য- নারীর স্বাবলম্বিতা নিয়ে সারগর্ভ অনেক আলোচনা হয়। আয়োজনের ঢোলকাঠি পিটিয়ে প্রতিনিয়ত তুলে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট, টাকা-পয়সা, সেলাই মেশিন বা অন্য কোন উপকরণ। নারী বিশেষতঃ দরিদ্র ও অনগ্রসর নারী স্বাবলম্বতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার এবং গাদা গাদা এনজিও। তারপরও ফলাফল নি¤œ স্তরে। নি¤œবিত্ত নারী যখন জীবনসংকটে এবং স্বতস্ফূর্ততায় ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করে, তখন অবধারিতভাবে সত্য তার কিছু অর্থ প্রয়োজন। যদিও সে নিজস্ব অথবা পারিবারিক সামান্য কিছু মূলধন জোগাড় করে কিন্তু তা অপ্রতুল। জটিল বাজার ব্যবস্থাপনা এবং তার অবকাঠামোগত সমস্যা একসময় ক্ষুদ্র পুঁজি গ্রাস করে ফেলে। যেহেতু সে একটা মোটা দাগের স্বপ্ন নিয়ে এখানে কিছুদূর সময় পার করেছে এবং মরীচিকাময় আলোকবর্তিকা দেখেছে সুতরাং সে পথ হাঁটবেই।
গন্তব্য বা প্রত্যাশিত কামনা কুসুম সম্পর্কে বিশ্লেষনের এতো দরকার কি? মনস্তাত্তিক এই বিষয়টা আমার মনে হয়, ফ্যাশন পাড়ায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটা বিশাল সংখ্যক নারীকে বন্দী করে রাখে। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানের মত বড় আদলে কর্ম প্রচেষ্টার প্রসার না ঘটলে আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে চিহ্নিত করবো কেন? অপরিনামদর্শী উদ্যোক্তা হতে চাওয়া নারীর নিকট অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর স্বচ্ছ না। সে কে? সে একজন জীবন সংকটে নিরুপায় নারী। 

এই ফ্যাশন জগতে সে কেন? ক্ষেত্রটা সহজ। অনেকেই সফল হতে দেখেছে। সুতরাং তারও সম্ভব। ফ্যাশন কেবল প্রশিক্ষণ বা পূঁজি সরবরাহ করলেই যে সব হয়ে যাবে- এটা অনেকখানি ভুল কথা। অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, ঢালা হয়েছে পুঁজিও। কিন্তু সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা তেমন কিছুই করিনি দর্জিগিরি শেখা অনেক নারীর সেলাই মেশিন এখন পরিবারের বাইরে আর কারোর পোশাক সেলাই করেনা। অনেকের স্বপ্নগুলো বাটিকের ফ্রেমগুলোবন্দী হয়ে পড়ে আছে ঘরের কোনায়। এভাবে হাজার হাজার কর্মী কিছুদিন পর আর ফ্যাশনকে পেশা হিসেবে ধরে রাখতে পারেনি। ফলে প্রধান পেশা হিসেবে ফ্যাশনকে আমরা অগ্রাধিকার

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.