শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৪

ব্যতিক্রমী গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে মানুষের ঢল

আবহমান কাল থেকে কৃষকের হালচাষের অবিচ্ছেদ্য অংশ গরু। আর মাঠ থেকে কৃষি পণ্য বহনের জন্য ব্যবহার করা হয় গরুর গাড়ি। গ্রামীণ এই গরুর গাড়ি নিয়ে ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দৌড় প্রতিযোগিতা। 

প্রতিযোগিতাকে ঘিরে সদর উপজেলা বেতাই গ্রাম পরিণত হয় উৎসবের গ্রামে। যা দেখতে ভিড় করে হাজার হাজার দর্শক। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সারাদিন এ দৌড় প্রতিযোগিতা চলে। আর এই খেলাকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। 

মেলাই মিষ্টি, মিঠাই, মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী, বাচ্চাদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও চরকি খেলার আয়োজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের মাঠে ঘন কুয়াশা, বৈরী আবহাওয়া ও প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে আশেপাশের জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে গরুর দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা উপভোগ করতে। 

বেতাই মাঠ জুড়ে যেন উৎসবে পরিণত হয়। আমন মৌসুমের ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠে এই গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গরুর গাড়ির প্রতিযোগিতা দেখতে দূরদূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের দোকান ও শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন স্টল বসেছিল মাঠটিতে। 

আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর, মহেশপুর, যশোরের চৌগাছা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর, আলমডাঙ্গা থেকে আগত ১১টি গরুর গাড়ির দল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এদের মধ্যে ১ম পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার টাকা, ২য় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, ৩য় পুরস্কার ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক দলকে সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়। 

যশোর চৌগাছা থেকে গরুর দৌড় দেখতে আসা আলী হাসান বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। আধুনিক যুগে এসে গরুর গাড়ির এমন দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে। খেলাটা উপভোগ করলাম। 

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা এলাকা থেকে খেলা দেখতে আসা রবিউল জানান, তিনি এর আগে কখনো এ খেলা দেখেননি। লোকের মুখে শুনেছেন। এজন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছেন।

খেলাই অংশ নেওয়া হাবিবুর রহমান  বলেন, এর আগেও বিভিন্ন অঞ্চলে খেলায় অংশগ্রহণ করেছি। এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন নতুন প্রজন্মকে আমাদের গৌরবান্বিত ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেবে। তাই প্রতিনিয়ত আয়োজন করা দরকার।আসিয়া খাতুন  জানান, তার স্বামীর বাড়ি শৈলকূপা উপজেলার ভাটই বাজারে। এখানে তার বাবার বাড়ি। প্রতিবছর খেলার সময় আসলে ভাইয়েরা ফোন করে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে। পরিবারের সবাই মিলে খেলা দেখতে আসেন। এটা তাদের কাছে ঈদের আনন্দের চেয়েও বেশি।

খেলার আয়োজক গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল হাসান মাসুম বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন করা হয়। আগামীতে আরও বেশি উৎসব মুখর ও ব্যাপকভাবে আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে। এ খেলার মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই।

গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ, মাদক দুর করতে হলে এ ধরনের বিনোদনের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে যুবসমাজকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হলে, তাদের জন্য নিয়মিত খেলার মাধ্যমে বিনোদনের মধ্যে রাখতে হবে। এ ছাড়া দেশের ঐতিহ্যবাহী খেলার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচিতি করানোর জন্য হলেও সরকারিভাবে আয়োজন করা উচিত।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.