INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

কালিহাতীতে মহাসড়কের পাশে সিসা তৈরির কারখানা

কালিহাতীতে মহাসড়কের পাশে সিসা তৈরির কারখানা

সাইদুর রহমান সমীর, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলে মহাসড়কের পাশে দীর্ঘ দিন যাবত সিসা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এই ‘পমিজান মেটাল’ কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা এই অবৈধ সিসা তৈরি কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, অবৈধভাবে এই কারাখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ কারখানা চালানো হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, পৌলি এলাকায় প্রায় এক বছর যাবত এই অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন একটি প্রভাবশালী মহল। পৌলি নদীর পাশে গড়ে উঠা এই বন্ধের দাবি জানালে তারা নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। রাত দিন এই অবৈধ কারখানা চলার কারনে পরিবেশ ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।


চিকিৎসকেরা জানান, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। এই অবৈধ সিসা কারখানার নির্গত গ্যাস মানুুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর কোনো পশু কারখানার আশপাশের ঘাস খেলে অসুস্থ কিংবা মারাও যেতে পারে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই কারখানার পশ্চিমে পৌলি এলাকা ও পূর্বে পৌলি এলাকা এবং উত্তর পাশে পৌলি নদী ও বাজার। কারখানা সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একজন গেইট পাহারা দিচ্ছেন। শ্রমিকেরা কাজ করছেন। চুল্লির মধ্যে অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য সাজানো আছে। এরপর আগুন দিয়ে তা গলানো হচ্ছে। পাশেই বৈদ্যুতিক পাখা থেকে বাতাস দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি হচ্ছে।


কারখানার শ্রমিক রংপুর এলাকার সুজন রায় জানান, ব্যাটারি বর্জ্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকযোগে কারখানায় আনা হয়। তিন মণ বর্জ্য থেকে দেড় থেকে দুই মণ সিসা তৈরি করা হয়। এখানে কাজ করার ফলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মাঝে মাঝে শরীরও চুলকায়।

পৌলি এলাকার বাসিন্দা রাকিব মিয়া জানান, ‘সিসা ফ্যাক্টরির কারণে গাছপালার পাতা বিবর্ণ হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। কারখানার পাশের ফসলি জমির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। আমি যতটুকু জানি এটি অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।’


মির্জাপুর এলাকার ট্রাক চালক তুহিন মিয়া জানান, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করার সময় পৌলি এলাকায় আসলে গ্যাসের গন্ধ আসে। তখন নাক ও চোখ জ্বলে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ পৃথিবীর’ সাধারণ সম্পাদক শহীদ মাহমুদ জানান, ব্যাটারি বর্জ্য পোড়ানোর সময় যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়, তার গাড়ির ধোঁয়ার চেয়েও মারাত্বক ক্ষতিকর। এটা মানবদেহ, জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।

পমিজান মেটালের ম্যানেজার তানভীর আহমেদ জানান, প্রায় এক বছর যাবত এই কারখানাটি করা হয়েছে। কারখানার জমি আমাদের, তবে মালিক উত্তরবঙ্গের। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করা আছে বলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযান করা হয়নি। এছাড়াও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা আছে। ঈদের সময় তাদের নতুন পাঞ্জাবী উপহার দেয়া হয়।


কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন জানান, এক গণমাধ্যম ব্যক্তির মাধ্যমে বুধবার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর আগে আমরা এ তথ্য পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমীর উদ্দীন জানান, আপনার যদি কোন কথা থাকে তাহলে অফিস টাইমে এসে কথা বইলেন।