মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

মধুপুরে স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করায় স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাইদুর রহমান সমীর, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্ত্রীকে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার অভিযোগে স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগি মোছা. আমিনা খাতুনের অভিযোগ, মধুপুর থানায় মামলা না নেওয়ায় তিনি টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মধুপুর থানা আমলী আদালতে মামলাটি করেন। 

গত রোববার(০৬ নভেম্বর)  আদালতের বিচারক মো. মাহবুবুর রহমান মামলাটি গ্রহণ করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন, মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ী গ্রামের মো. আব্দুছ ছাত্তারের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম সোহাগ, তার আগের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার, ভাই জাকির হোসেন, পিতা আব্দুছ সাত্তার ও মা জায়দা বেগম।

মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে একই উপজেলার শালিকা গ্রামের মেয়ে আমিনা খাতুনের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম সোহাগের বিয়ে হয়। সোহাগ আগের বিয়ে বিষয়টি গোপন করে কাবিন নামায় অবিবাহিত লিখে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর আমিনা খাতুন জানতে পারেন সোহাগের আগেরও স্ত্রী আছে। পরে সোহাগের প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারের সাথে পরিচয় হয় আমিনার। পরবর্তীতে সোহাগ আমিনা খাতুনকে নিয়ে উপজেলার মালাউড়ি গ্রামে বাসা বাড়া করে একত্রে বসবাস শুরু করে। এক পর্যায়ে আমিনা আক্তার সাত সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়। জানতে পেরে হঠাৎ করে আমিনা খাতুনকে ফেলে রেখে স্বামী সোহাগ আগের স্ত্রীর কাছে নিজ বাড়িতে চলে যায়। ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোন খোঁজ খবর না পেয়ে আমিনা বেগম মামলার স্বাক্ষীদেররকে সাথে নিয়ে সোহাগের বাড়িতে যায়। আমিনাকে দেখে সোহাগ রাগান্বিত হয়ে লাঠি দিয়ে মারপিট করে জখম করে। প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারের হুকুমে পেটের বাচ্চাসহ খুন করার উদ্দেশ্যে তলপেটে স্বামী সোহাগ এলোপাথাড়ি লাথি মারে। একপর্যায়ে আমিনার খাতুনের রক্তপাত শুরু হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় আমিনা খাতুনকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরিক্ষা করে জানান ভ্রুণ নষ্ট হয়ে গর্ভপাত হয়ে গেছে।

আমিনা খাতুন বলেন,  বিয়ের পর আমি আমার স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইলে না নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে জানতে পারি তার আগেরও বৃষ্টি আক্তার নামের আরেকটা স্ত্রী আছে। তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হওয়ার পর বুঝতে পারি কেন আমার স্বামী আমাকে বাড়িতে নিতে চায়নি। পরে  মধুপুর একটি বাড়া বাসা নেয় এবং আমরা একসাথে বসবাস শুরু করি। পরবর্তীতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হলে আমার স্বামী জানতে পেরে আমাকে একা ফেলে রেখে চলে যায়। আমি কোন উপায় না দেখে সোহাগের বাড়িতে যাই। এসময় আমার স্বামী সোহাগ আমাকে মারপিট শুরু করে। তার প্রথম স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারসহ দুজন মিলে আমার পেটে এলোপাথাড়ি লাথি মারে এবং রক্তপাত শুরু হয়। এভাবে তারা আমার পেটের সন্তানকে মেরে ফেলেছে। পরে সোহাগের ভাই, বাবা এবং মা তাঁরাও আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। এসময় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে স্বাক্ষীগণ উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমাকে ভর্তি করেন।

এ বিষয়ে সোহাগের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সোহাগের বাবা আব্দুছ সাত্তারের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে আমিনাকে কোন মারধর করেনি। সে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

এ বিষয়ে মহিষমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহির বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে মীমাংসা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমিনা সোহাগের বাড়িতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে এবং আমিনার গর্বের সন্তান নষ্ট হয়ে যায় শুনেছি। আর সোহাগ আগের বিয়ে গোপন করে কাবিন নামায় অবিবাহিত মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ে করে কাজটি ঠিক করেননি।

এ বিষয়ে মধুপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বিপিএম বলেন, মামলা না নিলেও একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন বলেন, আদালত থেকে এখনও কোন কাগজ পত্র পাইনি। পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.