বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দাম কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে ওএমএসের দুর্গন্ধযুক্ত চাল কিনছেন হতদরিদ্ররা

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় বাধ্য হয়ে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) দুর্গন্ধযুক্ত চাল কিনছেন হতদরিদ্ররা। এ চাল নিয়ে কেউ রান্না করে খাচ্ছেন, আবার কেউ গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কোটপাড়া এলাকার ওএমএসের ডিলার মোছা. আফরোজা জাহানের বিতরণকেন্দ্রে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আফরোজা জাহানের দাবি, খাদ্যগুদাম থেকে তাঁকে যে চাল সরবরাহ করা হয়েছে, তিনি সেই চাল বিক্রি করছেন। তিনি বিষয়টির প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাননি। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া চাল পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত হলেও বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন তিনি।শৈলকুপা পৌর এলাকায় চারজন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন আট হাজার কেজি হতদরিদ্রের মধ্যে বিক্রি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া চাল ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেন তাঁরা। ওই ডিলাররা হলেন আনিচুর রহমান, মোমেদ আলী, আবদুস সোবান ও আফরোজা জাহান।
আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিলার আফরোজা জাহানের বিতরণকেন্দ্রে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। দেড় শ টাকা জমা দিয়ে পাঁচ কেজি করে চাল কিনছেন ক্রেতারা। তাঁদের চাল তুলে দিচ্ছেন আফরোজার স্বামী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল নবীর ছোট ভাই মুকুল হোসেন।

চাল কিনতে আসা শৈলকুপার হাজামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সালামত হোসেন (৫৬) বলেন, তাঁরা এই কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত চাল কেনেন। প্রায় প্রতিদিনই ময়লা, পোকা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল নিতে হচ্ছে তাঁদের। প্রতিবাদ করলে ডিলার বলেন, তাঁর কিছুই করার নেই। বাধ্য হয়ে এ চাল কিনছেন তাঁরা। কবিরপুর এলাকার শ্যামলী খাতুন বলেন, ‘৬০-৭০ টাকা দিয়ে চাল কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর। তাই বাধ্য হয়ে যে চাল দিচ্ছে তাই নিচ্ছি।’

ফাজিলপুর গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, সংসারে আয় করার মতো মানুষ না থাকায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত চাল কিনে খাচ্ছেন। সামর্থ্য থাকলে এটা খেতেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, তারা কম টাকায় চাল বিক্রি করছে, তাই তিনি নিচ্ছেন। চালগুলো গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।ডিলার আফরোজা জাহানের প্রতিনিধি মুকুল হোসেন বলেন, তিনি যে চাল বিক্রি করছেন, তা আসলেই খাওয়ার অনুপযোগী। কয়েক দিন এ–জাতীয় চাল আসার পর খাদ্য বিভাগে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। গুদাম থেকে যে চাল দেওয়া হচ্ছে, তিনি তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অন্যদিকে পৌর এলাকার ডিলার আবদুস সোবহান বলেন, তিনি যে চাল বিক্রি করছেন, তা খাবার উপযোগী। দুই-একটি বস্তায় ময়লা থাকতে পারে, তবে খাবার অনুপযোগী নয়। ডিলার আফরোজার বিতরণকেন্দ্রে কেন এ চাল যাচ্ছে তিনিও বুঝে উঠতে পারছেন না। অপর ডিলার মোমেদ আলী জানান, তিনি খাদ্য বিভাগ থেকে যে চাল পাচ্ছেন, তা নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কার্তিক দেবনাথ বলেন, তাঁর গুদামে কোনো পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল নেই। ওএমএস ছাড়াও সরকারের নানা কর্মসূচিতে চাল দিয়ে যাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। ডিলার আফরোজা জাহানের ওই বিতরণ কেন্দ্রে দুই-একটি বস্তায় সামান্য সমস্যা থাকতে পারে। ১০ মাস আগে কেনা ওই চালে ফাঙ্গাস দেখা দিতে পারে। তবে তা খাবার অনুপযোগী নয় বলে দাবি করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.