মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

টাঙ্গাইলে পুলিশ ফাঁড়িতে আসামির মৃত্যু! পরিবারের দাবি হত্যা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে মো. লেবু মিয়া(৫৫) নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। তিনি হাজতখানার টয়লেটের ভেন্টিলেটরে থাকা রডের সাথে শক্ত সুতার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন।

নিহত লেবু মিয়া বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে।

তবে তার বড় ভাই নাগরপুর উপজেলার ভাররা ইউপির সচিব মো. বজলুর রশিদের অভিযোগ, লেবু মিয়া পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছেন।


মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপস্থিতিতে তার সুরতহাল করা হয়।

জানা গেছে, সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে সখিনা বেগম নামের তিন সন্তানের জননীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাঁশতৈল ফাঁড়ি পুলিশ সখিনার সাবেক স্বামী বাঁশতৈল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মফিজুর রহমান এবং একই গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে লেবু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।পুলিশ জানায়, পাঁচ বছর আগে ওই নারীর সঙ্গে স্বামীর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি একই গ্রামে আলাদা বাড়ি তৈরি করে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। এরপর মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় প্রবাসী ছেলের স্ত্রী তার সঙ্গেই থাকতেন। ছেলের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় রবিবার রাতে সখিনা বেগম বাড়িতে একা ছিলেন। সোমবার অনেক বেলা হলেও সখিনাকে না দেখতে পেয়ে পাশের বাড়ির লোকজন খোঁজ করতে তার বাড়িতে আসেন। পরে ঘরের ভেতরে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সখিনার গলায় রশির দাগ এবং গলার ডান পাশে কালো দাগ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সখিনার মা আকিরন বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। ওরে মারা হইছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

স্থানীয়রা জানান, ছেলের স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় রবিবার রাতে সখিনা বাড়িতে একা ছিলেন। এই সুযোগে কেউ তাকে হত্যা করতে পারে।

বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতের গলায় রশির ও গলার ডান পাশে কালো দাগ ছিল। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ঘটনায় ওই নারীর সাবেক স্বামীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। রাতে তাদের পৃথক হাজতখানায় রাখা হয়েছিল। রাত ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৪০ মিনিটের মধ্যে লেবু মিয়া টয়লেটের ভেন্টিলেটরে থাকা রডের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। সুরতহাল শেষে মরদেহ থানায় পাঠানো হয়েছে।

বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। সেখানে লেবু মিয়ার গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় তাকে দেখতে পাই।

মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, লেবু মিয়ার মরদেহ থানায় আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, লেবু মিয়াকে টয়লেটের ভেন্টিলেটরে থাকা রডের সাথে শক্ত সুতা দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পেয়েছেন। যা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তার উপস্থিতিতে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.