কাদেরিয়া বাহিনীর সরকারি বেসামরিক প্রধান হামিদুল হক বীর প্রতীকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কীর্তনখোলা নয়া কচুয়া জামে মসজিদ মাঠে ১৭ এপ্রিল রবিবার বাদ আসর বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়ার সঞ্চালনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক বীর প্রতীকের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোঃ হামিদুল হক বীর প্রতীকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার(ইউএনও) ফারজানা আলম, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সখীপুর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ চর্যাপদ গবেষক প্রফেসর আলীম মাহমুদ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এম ও গণি।
আলোচনা সভায় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ, পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হামিদুল হক বিএ বীর প্রতীকের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাতে খড়ি গজারিয়া ইউনিয়নের কালিয়ানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাঁর হাই স্কুল জীবনের সময় কেটেছে বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তিনি বাসাইল উপজেলার কাউলজানী নওশেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করে পরবর্তীতে টাঙ্গাইল শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে হাই স্কুল জীবনের কিছুটা সময় পার করেন।
পরবর্তীতে মোঃ হামিদুল হক বীর প্রতীক ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বাটাজোড় বিএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। সর্বশেষ তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মোঃ হামিদুল হক বিএ বীর প্রতীক সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএ পাস করেন।
মোঃ হামিদুল হক বিএ বীর প্রতীক তার কর্মজীবন শুরু করেন কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি গজারিয়া,কীর্তনখোলা, কালিয়ানপাড়া (কেজিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মোঃ হামিদুল হক বীর প্রতীকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের (১৯৭৬) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনিত সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রসংসদের লতিফ সিদ্দিকী ও কাজী আতোয়ার রহমান পরিষদের আনন্দ মজলিস সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর প্রতিষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসবে নির্বাচিত হয়ে উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।মোঃ হামিদুল হক বিএ বীরপ্রতীক ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি ১১নং সেক্টরের অধীভূক্ত বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর সহকারী বেসামরিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হামিদুল হক কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি সবসময় উপজেলার দল-মত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের সুখ-দুঃখ বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন।
পারিবারিক জীবনে হামিদুল হক বীর প্রতীকের সহধর্মিণী রমেছা বেগম, এক ছেলে ওবায়দুল হক মিন্টু ও চার মেয়ে আসমা আক্তার, সালমা আক্তার, নাজমা আক্তার ও রুমা আক্তার রয়েছে।
তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে রাজধানী ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ৫-ই এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।